বাংলাদেশের বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে আমরা যারা বেড়ে উঠেছি, তারা মিম ট্রলের সাথে অনেক পরিচিত হলেও পলিটিক্যাল সাট্যায়ার বা রাজনৈতিক কৌতুকের সাথে খুব বেশি পরিচিত ছিল না। একটা অজানা (আসলে জানাই ছিল) আতঙ্কের আবহ ঘিরে ছিল সবাইকে। জাতীয় পত্রিকাগুলোয় কার্টূন, কারিকেচার আঁকা একদমই বন্ধ হয়ে গেছিল। আগে জেনে নেয়া যাক পলিটিকাল সাট্যায়ার আসলে কী? সহজ ভাষায় বললে পলিটিকাল বা জনস্বার্থ বিষয়ক কোন ইস্যুতে কৌতুক বা ব্যাঙ্গ করার মাধ্যমে প্রতিবাদ বা মতামত জানানো। সরকার, নেতা,কর্মী, রাজনৈতিক দল এমনকি বিদেশী শক্তি সবাইকেই কৌতুক বা ব্যাঙ্গ দ্বারা ঘায়েল করা হয় এখানে। তবে এই পরিস্থিতি পাল্টে যায় ৩৬শে জুলাইয়ের পর। দীর্ঘদিনের এক প্রকারের দমবন্ধ অবস্থার অবশেষে অবসান ঘটে। মুক্ত পরিবেশ ও নতুন করে পাওয়া স্বাধীনতার অনুভূতি মানুষ প্রকাশ করতে থাকে মিমসের মাধ্যমে। শেখ হাসিনার হেলিকপ্টারে পালানোর মিম ছিল একদম প্রথমদিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া মিমস গুলোর ভেতর একটা। একটি পত্রিকা তারেক রহমানের কার্টূন ছাপালে তিনি নিজে এটি শেয়ার দিয়ে স্বাগত জানান। অর্থাৎ সামাজিক মাধ্যমে আগের চেয়ে মন খুলে নেটিজেনরা ট্রল বা ব্যঙ্গ করতে পারছেন। এরই সূত্র ধরে জেগে উঠেছে এতদিন চাপা পড়ে থাকা পলিটিক্যাল সাট্যায়ার জনরাটা। কেবল ৫ই আগস্টের পরই বিনা বাধায় এই প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছে নেটিজেনরা। এর আগে যে রাজনৈতিক সাট্যায়ার বা প্রতিবাদমূলক ব্যঙ্গ ফেসবুকে ছিল না এরকমটা বলা যায় না, কিন্তু পরিমাণ ও ব্যাপ্তিতে সেটা কখনোই এখনকার মত ছিল না। এর কারণ ছিল ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট সহ কিছু কঠিন আইন এবং অসহিষ্ণু এক পরিবেশ। কেবল কোন পেজে লাইক দেয়ার কারণেও অনেককে হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ফেসবুক ইউটিউবে শতশত পেজ বা চ্যানেল রয়েছ যেগুলো কেবল পলিটিক্যাল টপিকেই কন্টেন্ট বানাচ্ছে। বেশিরভাগই ৫ই আগস্টের পর তৈরী। অনলাইনে জনমত তৈরী করা, প্রতিপক্ষের ন্যারেটিভ খন্ডন করা, প্রতিপক্ষের লোকদের ঘায়েল করার ক্ষেত্রে মিমস, রীলস এখন এক মোক্ষম অস্ত্র। যদিও কিছুক্ষেত্রে শালীনতা বিবর্জিত ও অনৈতিক ভাষার প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সেটিও আসলে বাক স্বাধীনতার প্রবল উপস্থিতিকেই ইঙ্গিত করে। এখনো পর্যন্ত কাওকে এসব কারণে হয়রানির কথা সেভাবে শোনাও যায়নি। নিছক বিনোদন ছাড়াও রাজনৈতিক জাতির মনন তৈরী এবং অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে এক বিশাল অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। সামনের নির্বাচনী প্রচারণাতে যে সাট্যায়ারের ব্যবহার বাড়বে এটি সহজেই অনুমেয়। খুব অবাক লাগবে না যদি অদূর ভবিষ্যতে প্রফেশনাল মিমার বা কমেডিয়ানদের হায়ার করা রাজনৈতিক ও নির্বাচনি লক্ষ্য পূরণে।
পড়ালেখা করেছি ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অজানাকে জানার, নতুন জিনিস শেখার ও নতুন করে সবকিছুকে দেখার আগ্রহ ছোট থেকেই ছিল। সময়ের বিবর্তনে এখন লেখালেখির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশের চেষ্টায় আছি। আগ্রহের জায়গা মূলত সমসাময়িক ঘটনাবলি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু, আন্তর্জাতিক ও ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ।
0 Comments