বসবাস (ছোটগল্প)▪ পার্থসারথি*বিলাসবাবু জীবনবাবুর প্রাণের বন্ধু। জীবনবাবুর এমন কোন কাজ বা ঘটনা নেই যা জানেন না বিলাসবাবু। আবার বিলাসবাবুও কোন কিছু না জানিয়ে থাকতে পারেন না। জীবনবাবুকে খুঁটনাটি সবই জানান।জীবনবাবু বিলাসবাবুর অফিসের ওয়েটিং রুমে বসা। হাতে সুন্দর নকশা করা একটা খাম। দু\'আঙুলে বারবার খামটা নাড়ছেন জীবনবাবু। চোখে মুখে খেলা করছে আনন্দের দ্যুতি। রিসেপশনিস্ট স্বপ্না এইমাত্র জানালেন, স্যার আপনাকে ভেতরে যেতে বলেছেন।চেহারায় হালকা হাসির আভা ছড়িয়ে জীবনবাবু বিলাসবাবুর রুমের দিকে পা বাড়ান। ভেতরে ঢুকেই কুশল বিনিময়। হালকা কিছু কথাবার্তার পর জীবনবাবু কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বলেন- অবশ্যই আসবি। বিলাসবাবু খাম থেকে কার্ড বের করে দেখে হাসতে হাসতে বলেন- তা\' বলতে হবে না। নতুন জীবনে পদার্পণ করছিস আর আমি থাকবো না, তাই কি হয়? তো অচেনা একটা মেয়েকে বিয়ে করছিস, অনুভূতি কেমন?অচেনাও বলতে পারিস আবার অনেকটা চেনা জানাও বলতে পারিস।ঠিক বুঝতে পারলাম না।সত্যি বলতে কী, ওকে চিনতাম না। মা-বাবার পছন্দ করা। তারপর দু\'জন দু\'জনকে বেশ কিছুদিন সময় দিলাম। অবশ্য পারিবারিক সম্মতিতেই। দু\'জনার অচেনা জগতে দু\'জনের কিছুদিন হাঁটাহাঁটি। কিছুটা জানবার আর বুঝবার প্রয়াস আর কী! মিলে গেল সবকিছুতেই। এখন বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছি।বিলাসবাবুর সাফসাফ জবাব- ওসব বিয়ে-টিয়ের ধার ধারি না আমি। দু\'জনার পছন্দ, অপছন্দ, মতামত মোট কথা চিন্তা-চেতনা এক, তো হাতে হাত রেখে বন্ধুত্ব এবং বসবাস।পৃথিবীর সবকিছুই আপেক্ষিক। ভালো বা মন্দ বলে চিরায়ত কোন জিনিস নেই। তবে স্বল্প এবং আধিক্যের একটা ব্যাপার সবকিছুতেই জড়িয়ে আছে। তুই আজকের যে ব্যাপারটাকে তোর পছন্দনীয় ভাবছিস সেটা আগামিতে হয়ত নাও থাকতে পারে।ইয়েস, ইউ আর এ্যবসোলিউটলি রাইট। আমি সেই কথাই তোকে বলছি।তারপর ?তারপর আবার কী? আইডিওলজি ডিফারেন্ট, দেন লাইফ উইল বি সেপারেট। এ্যান্ড দেন গো ফর এনাদার পার্টনার।যাযাবর জীবন? না, না, যাযাবর হবে কেন? যাযাবররা তো বিয়ে করেই জীবন সঙ্গিনী বেছে নেয়। লিভ টুগেদার, যাকে আরা বাংলায় আক্ষরিক অর্থে বলতে পারি বিয়ে ছাড়া একত্রে বসবাস। ওটা আসলে শখের সময়ের সাথে বসবাস। খেললাম, ভালো লাগলো না, ভেঙে দিলাম ব্যস্।সংকীর্ণ দৃষ্টিতে দেখলে তাই। তবে এতে কিন্তু প্রাণ প্রাণের গতিতে এগোয়। আর দু\'জনার মাঝে থাকে সতত বুঝাপড়া।এটা বুঝা পড়া নয়। বলতে পারিস হিসাব-নিকাস। হয়েছে তো একটু অমিল, দিয়ে দে ঢিল, ব্যস্ মৌমাছির উড়াউড়ি! আর ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানো।বিলাসবাবু বেশ অবাক হয়েই বলে- এত সুন্দর এবং প্রাণময় ব্যাপারটাকে তুই এত হালকাভাবে নিচ্ছিস কেন ?- কন্ঠে কিছুটা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।জীবনবাবুর স্পষ্ট উচ্চারণ- আমি বিন্দুমাত্র হালকা করে দেখছি না। তোদের মতে জীবনটা হচ্ছে হিসাব এবং ভোগ, আর কিছুই না।তাই-তো খাও-দাও-ফূর্তি করো। এই-তো জীবন।– বলে বিলাসবাবু প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন।জীবনবাবু বেশ আবেগ প্রবণ হয়ে বলেন- হিসাব এবং ভোগ ছাড়াও এমন কিছু জিনিস আছে যার জন্য আমরা বেঁচে আছি এবং আমরা মানুষ। যার জন্য ফুল মানুষের মনের মধ্যে স্থান পায়। একই সূর্য প্রতিদিন নতুন ভোর এনে দেয়। স্বাধীনতার জন্য, ভাষার জন্য মানুষ জীবন বলি দেয়। যার জন্য দেশকে মায়ের সাথে তুলনা করা হয়। প্রেম আর ভালোবাসা এক নয়। সমস্যা আছে তো সমাধানও আছে।অন্তহীন গভীরতা অন্তহীন ভাবনা। লিভ টুগেদারের এত কিছুর দরকার পড়ে না। শুধু তোমাতে আমাতে বুঝাপড়া, ব্যস দু\'জনে বসবাস করা। তুই অনেক বদলে গেছিস , বিলাস!সময়ের টানে অনেক কিছুই বদলায়।সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়।তা\' তো অবশ্যই। তবে দিক আর উল্টোদিক বুঝতে হবে। যে জীবন আমরা আদিম যুগেই ভোগ করে এসেছি তোরা এখন সেদিকেই যাচ্ছিস। আগে দলে দলে লিভ টুগেদার করতো আর এখন দু\'জনে একাকি।এইতো পার্থক্য। যে যেরকম বুঝে।– বিলসবাবু আর তর্ক বাড়ান না।জীবনবাবু স্বাভাবিক ভাবেই বলেন- কথায় কথায় অনেক কথা হলো। আজকাল তোর খবরাখবর তো তেমন পাই না। ডুবে ডুবে কোথাও জল খাচ্ছিস নাকি?বিলাশবাবু ইশারা দিয়ে বলেন- যাবার সময় রিসেপশনে বসা মেয়েটাকে দেখে যাস। তারপর মোবাইলে জানাস। বল, চা না কফি ।জীবনবাবু হাসতে হাসতেই বলেন- তোর যেটা সুবিধা।কফি চলুক।অসুবিধা নেই।*কমিউনিটি সেন্টার। বরপক্ষ ও কনেপক্ষ, উভয়পক্ষের লোকজনে সমাগম। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার মাঝে খুশীর জোয়ার। যেন প্রাণ থেকে প্রাণে, জীবন থেকে জীবনে নানান রঙের আবহ-বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। আর নিংড়ে নিচ্ছে সুখ এবং আনন্দের প্রাণরস। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে জীবন ও মোহনা।বিলাসবাবু ও স্বপ্না এক সঙ্গে আসেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেড়ানো সুখ বলয়ে চোখ বুলাচ্ছেন। তারপর এগিয়ে আসেন জীবনবাবুর কাছে। জীবনবাবু এখন নতুন ভুবনের নতুন বাসিন্দা। আজ থেকে একসঙ্গে বাঁধা হলো জীবন মোহনার জীবন গাঁথা। বিলাসবাবু জীবনকে অভিনন্দন জানান। তারপর বলেন- স্বপ্না আর আমি আগামিকালই নতুন বাসায় উঠছি। জীবনবাবু তাকিয়ে থাকেন আরও কিছু শুনবার জন্য। বিলাসবাবু একটা হাত স্বপ্নার হাতে বিছিয়ে দিয়ে বলেন- আমরা ডিসিশন নিয়েছি লিভ টুগেদার শুরু করবো। আমাদের দু\'জনার মাঝে বুঝাপড়া কমপ্লিট।স্বপ্না হাসতে হাসতে বলেন- আমাদের দু\'জনার রুচিতে অসম্ভব রকমের মিল। জীবনবাবু বিলাসবাবুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। হাতে হাত মিলিয়ে , জীবনবাবু বলেন- ওয়েলকাম, মোস্ট ওয়েলকাম টু দিস ওয়ার্ল্ড।বিলাসবাবু বেশ খুশি হয়ে বলেন- তাহলে আমার বাসায় আসছিস তো?আসবো না মানে! অবশ্যই আসবো এবং সপরিবারে।*পঁচিশ বছর পর। ফ্ল্যাট বাড়ি। গুলশান অভিজাত আবাসিক এলাকায় লেক পাড়ে । চারদিকে সমাজের সব উচ্চবিত্তের বসবস।হুসহাস গাড়ি যাচ্ছে আর আসছে। বাগান বাড়ির গাছের ডালে ডালে পাখিদের কলকাকলি। কারও কারও মন পাখির কলকাকলি থেকে সুখ নিংড়ে নেয়। কেউবা আবার নষ্টালজিয়ায় ভোগে পাখিদের ঠোঁটে ঠোঁট মেলানো মনোরম দৃশ্য দেখে।কিন্তু বিলাসবাবুকে এসবের কোন কিছুই আজকাল নাড়া দেয় না। পাখির কলকাকলি কোন রকম ভাবান্তর ঘটাতে পারে না। বাগানের ফুলগুলো শুধুই ফুল মনে হয়। ঘরের দামি শো-পিচগুলো শুধুই প্রাণহীন বস্তু। অথবা জানালার ফাঁকে লেগে থাকা এক টুকরো নীল আকাশ কষ্টের আর দুঃখের নীলাবরণকে আরও গাঢ়তর করে তোলে। বিশাল সুসজ্জিত ফ্ল্যাট বাড়িতে একাকি এক আহত পঙ্গু সৈনিক। সঙ্গী বলতে খাঁচায় বন্দি এক জোড়া টিয়ে পাখি।টিয়ে পাখি জোড়ার ঠোঁটে ঠোঁটে মেলানো মমতা মেশানো মহূর্তগুলো বেশ আলোড়িত করে বিলাসবাবুকে। পোষা বিড়াল মিনি। আর অফুরন্ত বিদেশী মদ ও সিগারেট। অবশ্য খাওয়া পরার কোন চিন্তা বিলসবাবুর জগৎকে আঁচড় কাটতে পারে না। কারণ ব্যাংক ব্যাংক ব্যালেন্সের পরিমাণটা বেশ শক্ত-পোক্ত। অথচ গত সপ্তাহেও বিলাসবাবু ছিল এক টগবগে প্রৌঢ় যুবক। মাথার চুলে পাক ধরলেও তা\' কলপের রঙে ঢেকে রেখেছেন। মাঝে মধ্যে অনামিকার সোহাগী হাত উপড়ে ফেলেছে ঊঁকি দেয়া পাকা চুল। অথবা প্রেমের চাদরে ঢেকে দিয়েছে বিলাসবাবুর কষ্টের নিঃশ্বাসগুলো। দু\'জন শুধুই দু\'জনার। কী এক অসম মমতায় দু\'জন দু\'জনকে আগলে রেখেছেন। সামান্য একটু ফুলের টোকাতেও যেন ওরা ভীষণ রকম মুষড়ে পড়তো। একজন অন্যজনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকতো ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ সমুদ্র পাড়ি দিতে।মানুষের মন আকাশের রঙ। অনামিকা অথবা বিলাসবাবু নিজেদের যতই পরীক্ষা নিরীক্ষা করুক ; ওরা মানুষ। স্বপ্নার সঙ্গে লিভ টুগেদার দ্বিতীয় বর্ষে গড়িয়েই ইতি টানতে হয়। স্বপ্না এবং বিলাসবাবু দু\'জনেই ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে পৃথক সত্ত্বা। একই ছাদের নিচে এসেছিল স্বপ্ন মেলানোর তাগিদে। প্রথমে ওরা উভয়েই উভয়ের মধ্যে দারুণ মিল খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু কখন যেন ওদের অজান্তেই অমিলগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে দিনে দিনে অমিলগুলো মহীরুহ হয়ে প্রকাশ হলো। আর টুকরো টুকরো প্রেম , টুকরো টুকরো স্মৃতি, স্বপ্ন মেশানো ভালো লাগাগুলো আগাছায় ঢেকে গেল। মহীরুহের ছায়ায় ছায়ায় একসময় প্রাণহীন হয়ে মিইয়ে যায় বিলাস-স্বপ্নার সাজানো বাগান। বিলাস ভ্রমর হয়ে উড়ে যায় অন্য বাগানে। আর স্বপ্নাও চলে যায় আরেক বাগানে। যে স্বপ্না অন্য জনের সঙ্গে আগে আরও পাঁচ বছর লিভ টুগেদার করেছিল। সম্পর্কের টানাপড়েনে কারও ঔরসের সন্তান নিতে পারে নি স্বপ্না। স্বপ্নার বাগানে এখন কোন ভ্রমর উড়াউড়ি করে না। ওর চোখের সামনে ভ্রমর উড়ে যায় অন্য বাগানে।স্বপ্নার স্বপ্ন থেকে সরে এসে বিলাসবাবু ডুবেছিল আকন্ঠ মদ্যপানে। খুঁজে বেড়াতো ফেলে আসা সুখময় মুহূ্র্তগুলোকে। ক্ষণিকের তরল ভাবনায় ভেসে বেড়াত বিলাস। সিগারেটের ধোঁয়ায় কুণ্ডলী পাকিয়ে উড়ে বেড়াত বিলাসাবাবুর হোঁচট খাওয়া প্রেমের নিঃশ্বাস। পথ চলতে চলতে মদের ডেরায় এক অপরূপা রূপসী, হৃদয় মোহিনী অনামিকা নাম্নী হৃদয়ের নাগাল পেলেন।পরিচয় থেকে চেনা-জানা। অতঃপর প্রেম। প্রেমের বীজগুলো দু\'জনকে তাড়িয়ে বেড়াতো কাছে পাবার বাসনায়।ভালো বুঝাপড়া হয় দু\'জনার মাঝে। অনামিকা ভাবে লাইফ পার্টনারের সঙ্গে যুৎসই হচ্ছে না। শীঘ্রই পরিবর্তন দরকার। হাত বাড়িয়ে ডেকে নেয় বিলাস নামের সুঠাম দেহী, অপরূপ হৃদয়কাড়া এক ধনবান স্বপ্নকে। তারপর কেটে যায় প্রায় দুটো যুগ। ফসল এক সন্তান অনিকেত।অনিকেত এখন তেইশ বৎসরের এক টগবগে যুবক। বাবার আদর্শে লালিত হয়ে নিজেই স্বাতন্ত্র্য পুরুষ। নিজেই জীবন সঙ্গিনী বেছে নিয়েছে। বাবার কাছে ফেরার কোন তাগিদ অনুভব করে না অনিকেত।বিদেশেই ঘাটি গেড়েছে বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে।বিলাসবাবুর মনের কোণে স্বপ্ন উঁকি দেয়, অনিকেতকে সঙ্গে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু অনিকেত তো স্বাধীন পুরুষ। বড় জোর এক ঘন্টা, দু\'ঘন্টা, একদিন, দু\'দিন অথবা আরেকটু সময় কাটিয়ে যেতে পারে পিতা বিলাসের আঙিনায়। বিলাসবাবুকে ঘৃণা করে চলে গেছে তা কিন্তু নয়। লিভ টুগেদার বেঁচে থাকে ভোগে, ত্যাগে নয়। অনামিকা ভোগের আকর্ষণে ছুটে চলে গেছে অন্য বাগানে। বিলাসবাবু এখন একাকী। বিরহের সুরগুলোই এখন নিত্যসঙ্গী।আকন্ঠ মদ পান করে সোফায় নেতিয়ে পড়ে আছেন বিলাসবাবু। চোখের পাতায় পাতায় কষ্টগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কলিংবেলটা বেজে ওঠতেই চেতনায় ফিরে আসেন বিলাসবাবু। হেলে-দোলে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দেন। বাইরে জীবনবাবু দাঁড়িয়ে আছেন। পথ ছেড়ে দাঁড়ান বিলাসবাবু।প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে জীবনবাবু ঘরে প্রবেশ করেন। তারপর এদিক সেদিক তাকান। চোখ জোড়া কাউকে খুঁজছে। বিলাসবাবু সোফায় বসেই আবার ঝিমোচ্ছেন। কী ব্যাপার বউ\'দি কোথায় ?বিলাসবাবুর নিরস উত্তর- নেই।নেই মানে!– বিস্ময় প্রকাশ করেন জীবনবাবু।নেই মানে, নেই। চলে গেছে। আমার সঙ্গ ওর আর ভালো লাগছে না। পারিস তোরা! খেলার ছলে জীবন ফেলে তামাশা নিয়ে মেতেছিস। এটা জীবন হয় না বিলাস। জীবনটা বিলাসের বস্তু নয় বা শুধু ভোগের ক্ষেত্রও নয়। ভোগ এবং ত্যাগ দুটো মিলে জীবনের পূর্ণতা বিলাসবাবু আর কোন কথা বাড়ান না। চুপচাপ সিগারেট টেনে চলেছেন।একটা খাম এগিয়ে দিয়ে জীবনবাবু বলেন- আমার ছেলের বিয়ে। অবশ্যই আশীর্বাদ করতে আসবি।হাত বাড়িয়ে কার্ডটা নেন এবং বলেন- জীবন তুই অনেক ভালো আছিস। আমি সত্যিই মরীচিকার পেছনে ছুটেছি এতদিন। আমার টাকা-পয়সার কোন অভাব নেই। অথচ আমি ভিখারির চেয়েও ভিখারি। আমার আছে বলতে এখন কিছুই নেই। ধন্যবাদ, দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছিস। জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ানো শালিক অথবা ময়না অথবা টিয়া পাখির সুখ দেখিস। ওরাও সুখী এবং বাস করে সুন্দর সাজানো ঘরে। ভালো থাকিস- এই বলে জীবনবাবু চলে যান।আর চলে যাওয়া পথের দিকে বিলাসবাবু তাকিয়ে থাকেন শূন্য দৃষ্টিতে। শেষ
বিলাসবাবুর মনের কোণে স্বপ্ন উঁকি দেয়, অনিকেতকে সঙ্গে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু অনিকেত তো স্বাধীন পুরুষ। বড় জোর এক ঘন্টা, দু\'ঘন্টা, একদিন, দু\'দিন অথবা আরেকটু সময় কাটিয়ে যেতে পারে পিতা বিলাসের আঙিনায়। বিলাসবাবুকে ঘৃণা করে চলে গেছে তা কিন্তু নয়। লিভ টুগেদার বেঁচে থাকে ভোগে, ত্যাগে নয়। অনামিকা ভোগের আকর্ষণে ছুটে চলে গেছে অন্য বাগানে। বিলাসবাবু এখন একাকী। বিরহের সুরগুলোই এখন নিত্যসঙ্গী।আকন্ঠ মদ পান করে সোফায় নেতিয়ে পড়ে আছেন বিলাসবাবু। চোখের পাতায় পাতায় কষ্টগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কলিংবেলটা বেজে ওঠতেই চেতনায় ফিরে আসেন বিলাসবাবু। হেলে-দোলে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দেন। বাইরে জীবনবাবু দাঁড়িয়ে আছেন।
0 Comments