

ভূত বিক্রয় বিজ্ঞাপনমোবারক হোসেনবিজ্ঞাপন:“তিনটি সুপ্রশিক্ষিত, নির্ভরযোগ্য এবং একেবারে পোষ মানা ভূত বিক্রয় হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন — ০১৩১৩…১৩।”এই বিজ্ঞাপনটা প্রথম দেখি ‘জ্যোৎস্না বাজারের’ নোটিশ বোর্ডে। মনে হলো মজা করে কেউ লিখেছে। কিন্তু পোস্টারের নিচে রক্ত লেগে থাকা অক্ষরগুলো একটু বেশিই বাস্তব মনে হলো।আমি, সুলতান মাহমুদ, স্থানীয় সাংবাদিক। ভূত-প্রেত টাইপ নিউজ কভার করতে ভালোবাসি। তাই যোগাযোগ করলাম।একজন বয়স্ক মানুষ দরজা খুললেন। গলায় হাঁসফাঁস করা গলা, মুখে কাঁচাপাকা দাঁড়ি।— “আপনি কি ভূত কিনতে এসেছেন?”আমি একটু কাশলাম, “না, মানে, দেখতে এসেছি... যদি সত্যিই পোষা ভূত থাকে, একটা প্রতিবেদন লিখব।”— “আসুন, আলাপ করি। ওদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিই। তবে সাবধান করবেন—ভদ্রতা রক্ষা না করলে ওরা অভিমান করে প্রেতভূত হয়ে যেতে পারে।”ভূত নম্বর ১: হেদায়েত আলি (নিশিচর)সাবেক কবরখানার রক্ষক। এখন ছাদের টিনের নিচে ঘুমায়। দিনে দেখা যায় না, রাতে ছায়ার মতো ঘোরে। খুবই বিনয়ী। তার গুণ হলো, সে চোর ধরা এক্সপার্ট। কোনো বাড়িতে চোর ঢুকলে সে এমন শব্দ করে, যেন পিশাচ গান গাইছে। চোর নিজের ইচ্ছায় পুলিশ ডাকতে চলে যায়।ভূত নম্বর ২: মালতী রানী (ভজনা বিশেষজ্ঞ)সাবেক রাজবাড়ির দাসী। রান্নাঘরে থাকে। সে যেকোনো মানুষকে এমন ভজনা শোনাতে পারে যে সে পাঁচ মিনিটেই তার পাপ স্বীকার করে কাঁদতে কাঁদতে তওবা করে। তবে খেয়াল রাখতে হয়—মালতী একবার শুরু করলে তাকে থামানো মুশকিল।ভূত নম্বর ৩: ছোটন (বাচাল ভূত)মাত্র ৭ বছর বয়সে মারা গেছে। অদ্ভুত বাচাল। ওর কাজ হলো বাড়িতে একা থাকা শিশুদের গল্প বলা, খেলাধুলা করা এবং তাদের শয়তানি থেকে দূরে রাখা। তবে সমস্যা হলো, ছোটন কারো মুখের কথার মাঝে ঢুকতে ভালোবাসে।“কেন বিক্রি করছেন?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।বৃদ্ধ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন।— “একটা সময় ছিল, আমি একা ছিলাম, ওরাই ছিল আমার পরিবার। এখন আমার ছেলে-মেয়ে বিদেশে ফিরে এসেছে। তারা বলে, ভূতের সাথে থাকা অশুভ… ওদের নাকি স্বপ্নে ভয় দেখায়।”একটু থেমে বললেন, “আমি চাই, ওরা এমন বাড়িতে যাক যেখানে মানুষ ওদের ভয় না পেয়ে আপন করে নেবে। ওরা দুঃখ দেয় না, দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।”আমি প্রতিবেদন লেখা বন্ধ করলাম। তিনটা পোষা ভূত চেয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।সেদিন রাতেই দেখলাম আমার দরজায় একটা নতুন পোস্টার—\"ভূত গ্রহণযোগ্য পরিবার পাওয়া গেছে। কেউ যদি ভালোবাসা দিতে চায়, আমরা সব সময় পাশে আছি।\"নিচে লাল কালিতে লেখা:\"ভূতেরা বিক্রি হয় না। ওরা ভালোবাসা পায়।\"
0 Comments