\"আমি সতী – সাহসিনী এক নারীর জীবনগাথা\"লিখেছেন: মোবারক হোসেন---১. শুরুটা ছিল একটি ছোট গ্রামে…সায়মা জন্ম নেয়েছিল জামালপুর জেলার একটি অজপাড়াগাঁয়ে। পিতৃহীন শৈশব, মায়ের অভাবের সংসারে বড় হওয়া। যখন পেটের ভাত নেই, তখন চরিত্রের শুদ্ধতা কোনো অলংকার নয় – এই কথা সে প্রথম বুঝেছিল ক্লাস নাইনেই, যখন স্কুল মাস্টার তার কোচিং ফ্রি দেয়ার বদলে ‘ভিন্ন কিছু’ চেয়েছিল।সেইদিনই সে শিখে যায়, দুনিয়া প্রেম বোঝে না, বোঝে দরদাম।---২. প্রেমের শুরু, প্রতারণার রঙপ্রথম প্রেম ছিল রুমেল নামের এক কলেজ ছাত্রের সঙ্গে। রুমেল বলেছিল, “তুই শুধু আমার, অন্য কাউকে ছুঁবি না।” কিন্তু সায়মা একদিন হাতে ধরেছিল রুমেলের মিথ্যা—সে বিয়ে করেছিল অন্য মেয়েকে। সেই বিশ্বাসঘাতকতায় সে প্রথম ভেঙেছিল।দ্বিতীয় প্রেম হয় শহরে গিয়ে, একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সময়। সোহেল নামের এক সুপারভাইজার তাকে \'ভালোবাসি\' বলে শয্যায় টেনেছিল। তারপর আর ফিরে তাকায়নি।তৃতীয় প্রেম – এইটা ছিল ভিন্ন। মিলনের পর ছেলেটা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। সায়মা ভেবেছিল, এবার বুঝি সত্যিকারের ভালোবাসা। কিন্তু পরিবারের মান-ইজ্জতের অজুহাতে সে হারিয়ে যায়।---৩. বিয়ে এবং বঞ্চনার গল্পসায়মা দুইবার বিয়ে করে। প্রথম স্বামী ছিল এক ড্রাইভার, যে ভেবেছিল মেয়েটা ‘খারাপ’, তার অতীত জানার পর সে দিনের পর দিন গায়ে হাত তুলেছে।দ্বিতীয় স্বামী ছিল এক ব্যবসায়ী, যার কাছে সায়মা ছিল শুধুই একটি শরীর। দুবছর পর তালাক।---৪. শহরের আলোছায়ায়ঢাকায় এসে সায়মা সিদ্ধান্ত নেয়, সে আর কাউকে বিশ্বাস করবে না। সে ঠিক করে, নিজের শরীর, নিজের ইচ্ছা – নিজের মতো করে ব্যবহার করবে।৩১ জন পুরুষের সঙ্গে সে ঘনিষ্ঠ হয়, কেউ টাকার বিনিময়ে, কেউ আবেগের খেলায়।কিন্তু প্রতিবার শেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে নিজেকে বলে,\"তুই সতী, কারণ তোকে কেউ জোর করে কিছু দেয়নি। তুই নিজের ইচ্ছায় বেঁচেছিস।\"---৫. আত্মবিশ্বাসের আলোআজ সায়মা একজন এনজিও কর্মী। নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ায়। বলে,“সংসার করলে সতীত্ব রক্ষা হয় না, আর দেহ দিলে সতীত্ব হারায় না। সতীত্ব মানে নিজের শরীর, মন আর সম্মানের ওপর নিজের অধিকার।”সে আজ সমাজের চোখ রাঙানিকে ভয় পায় না। নিজের যন্ত্রণাকে পুঁজি করে সে অন্য মেয়েদের সাহস দেয়। আর প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে—“আমি সতী। আমি লড়াকু। আমি নারী।”---এই গল্প কোনো নির্দিষ্ট নারী নয়, অসংখ্য সায়মাদের গল্প। যারা সমাজের চোখে পাপী, অথচ নিজ বিবেকের কাছে পবিত্র।
0 Comments