সন্ধ্যার আলো নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। শহরের ব্যস্ত সড়ক থেকে একটু দূরে বসে আছে রায়হান, এক কাপ চায়ের কাপে ঠোঁট ছুঁইয়ে বারবার একই চিন্তায় হারিয়ে যাচ্ছে—\"আমি কি কাপুরুষ?\"রায়হানের বয়স ত্রিশ ছুঁই ছুঁই। একসময় সে ছিল অতি সাহসী, অন্তত বন্ধুদের চোখে। কিন্তু এক জায়গায় এসে সে মুখ লুকিয়েছে, সরে গেছে, পালিয়েছে—ভালোবাসা থেকে।মালিহা। একজন দৃঢ়চেতা, প্রাণবন্ত তরুণী। ওদের দেখা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্লাস, ক্যাম্পাস, ক্যান্টিন—সব জায়গায় রায়হানের পাশে ছিল মালিহা। ধীরে ধীরে এক আশ্চর্য টান গড়ে ওঠে ওদের মধ্যে। একদিন মালিহা বলেই ফেলেছিল,—\"আমি তোমাকে ভালোবাসি রায়হান।\"রায়হান চুপ করে ছিল। মুখে কিছু বলেনি, চোখে জল জমেছিল। কিন্তু সে জানত, এই ভালোবাসা সে বহন করতে পারবে না। কারণ রায়হান জানত, তার পরিবার কখনো মালিহাকে মেনে নেবে না। মালিহা গ্রামের মেয়ে, গরিব ঘরের। আর রায়হান এক অভিজাত পরিবারের সন্তান।সে ভয় পেয়েছিল—সংসারের, সমাজের, পারিবারিক প্রতিরোধের।সে কিছু না বলে হারিয়ে গিয়েছিল মালিহার জীবন থেকে। ফোন বন্ধ, ঠিকানা বদল, নতুন শহর, নতুন চাকরি—সবকিছু পালিয়ে যাবার চেষ্টায়।পাঁচ বছর কেটে গেছে।৷হআজ হঠাৎ সে শুনল—মালিহার বিয়ে হচ্ছে। খুব সাধারণ একজন স্কুলশিক্ষকের সঙ্গে।রায়হানের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল।সে কি মালিহাকে পাওয়ার মতো সাহস দেখাতে পারত না?সে কি বলতে পারত না—\"তুমি ছাড়া আমি কিছুই না?\"না, বলতে পারেনি। সে ছিল কাপুরুষ।চায়ের দোকানের সামনে দিয়ে একটা বরযাত্রী গাড়ি চলে গেল। হর্ন বাজল, আলো ঝলমল, বাজনা বেজে উঠল।রায়হান তাকিয়ে রইল।তার মনে হল, সে সারা জীবন সেই গাড়ির পেছনেই দৌড়াবে—কখনো পৌঁছাতে পারবে না।চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে কাপুরুষ, এই স্বীকারোক্তির চেয়ে বড় কোনো শাস্তি নেই তার জীবনে।
0 Comments