মোবাইল মন্ত্রী

গ্রামের নাম তাজপুর। শুনতে শান্তিপূর্ণ হলেও গ্রামের ভেতরে যতসব “উন্নয়নশীল ঝড়”! আর এই ঝড়ের কেন্দ্রে রয়েছেন এক অসাধারণ ব্যক্তি—মোতালেব মোবাইল।না, তিনি কোনো মোবাইল কোম্পানির মালিক নন। তবে যার কাছে সবসময় ৪টা মোবাইল, ৬টা চার্জার, ৩টা পাওয়ার ব্যাংক থাকে এবং যিনি নিজেকে বলেন “চলমান প্রযুক্তির বাতিঘর”।গ্রামে কারও বাচ্চার নামকরণ থেকে শুরু করে কার কোন পোস্টে কে হাহা দিছে—সব তথ্য মোতালেবের কাছে আগে আসে।একদিন ইউনিয়ন অফিস থেকে ঘোষণা এলো—> “আগামীকাল তাজপুর হাইস্কুল মাঠে ডিজিটাল মেলা অনুষ্ঠিত হবে। সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।” মোতালেব সেটা শুনেই নিজের ফোনে ফেসবুক লাইভে এলেন—— “বন্ধুগণ! আমি মোতালেব মোবাইল, তাজপুরের ডিজিটাল পিতা। কালকে মেলায় যাবো, দেখামু কেমনে মোবাইলেই সব সমস্যার সমাধান হয়।”পরদিন তিনি হাজির হলেন মেলায়। পরনে সাদা পাঞ্জাবি, পেছনে লেখা—“ডিজিটাল দাদাভাই”, হাতে সেলফি স্টিক আর কানে একসঙ্গে দুইটা ব্লুটুথ!প্রথমেই গেলেন ফ্রি ইন্টারনেট বুথে। বললেন,— “ভাই, এইখানে প্রেমের এসএমএস পাঠানো ফ্রি কি না?”পাশের স্টলে গিয়ে প্রশ্ন,— “ভাই, মোবাইলের মাধ্যমে কীভাবে চেয়ারম্যান হওয়া যায়?”লোকজন প্রথমে হাসতে লাগল, পরে শুনল মোতালেবের ভাষণ—— “ডিজিটাল বাংলাদেশ মানেই সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে একটা দেশপ্রেমের স্ট্যাটাস, দুপুরে ইউটিউবে ৩টা ভিডিও দেখা, আর রাতে টিকটকে দেশগান গাওয়া। এই হইলো আসল উন্নয়ন!”মেলার প্রধান অতিথি হঠাৎ তার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,— “আপনি কে?”মোতালেব গম্ভীর মুখে বললেন,— “আমি মোবাইল মন্ত্রী।”— “কোন মন্ত্রণালয়ের?”— “টিকটক, ফেসবুক, ফেক নিউজ ও কানাঘুষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়!”সবাই হেসে উঠলো। কিন্তু সন্ধ্যায় দেখা গেল সবচেয়ে বেশি মানুষ ভিড় করেছে মোতালেবের টেবিলের সামনে।কারও প্রশ্ন:— “ভাই, ফেক প্রোফাইল বানিয়ে কারে প্রেমে ফাঁসানো যায় কেমনে?”আরেকজন:— “ভাই, ভাইরাল হইতে কি ক্যাট ফিল্টার ভালো না কুকুর?”মোতালেব মোবাইল গম্ভীরভাবে বলল,— “প্রথমে শেয়ার, পরে উপকার। আগে ভোট, পরে অ্যাপ!”