মেঘ বাড়ি (পর্ব- ৩)

 অরণ্য জেগে ওঠার পর নিজের হাতের পুরনো নকশাটা ভালো করে দেখলেন। মেঘ বাড়ির মূল ভবনের নিচে, উত্তর কোণের পাথরের পাটাতনের নিচে একটা গোপন সিঁড়ির কথা লেখা আছে।এই বাড়ির ইতিহাসে এমন কিছু লেখা ছিল না। মেঘলার মৃত্যুর ঘটনাও যতটা রহস্যে ঘেরা, তার চেয়েও বেশি রহস্যে ঢাকা ছিল তার জীবনের শেষ কয়েক মাস।সেদিন বিকেলেই অরণ্য একটি ছোট মশাল, খাতা, কলম আর ক্যামেরা নিয়ে রওনা দিল বাড়ির সেই অংশে। ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেললেন পাথরের পাটাতন—নিচে একটা সংকীর্ণ সিঁড়ি, যার নিচ থেকে আসছে ঠান্ডা বাতাস আর দূরে কোথাও হালকা বৃষ্টির গন্ধ।নেমে গেলেন নিচে। ঘন অন্ধকার। মশালের আলোয় দেখা গেল একটা ছোট ঘর। দেয়ালের গায়ে অদ্ভুত সব চিহ্ন—পুরনো লিপি, যার কিছুটা সংস্কৃত, কিছুটা বাংলা, আর কিছু একেবারেই অচেনা।ঘরের এক কোণে রাখা একটি আয়না। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই অরণ্য তার নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেল না—বরং সেখানে এক কিশোরী মেয়ে, ভেজা চুলে তাকিয়ে আছে তার চোখে চোখ রেখে।হঠাৎ সেই প্রতিচ্ছবি মুখে বলল——“তুমি এসেছে সত্য জানার জন্য। তবে আমি শুধু গল্প নই, আমি শাস্তি... আমি অভিশাপ... আমার মৃত্যুর ন্যায়বিচার হয়নি!”মেঘলা কাঁদছে। চারদিক ঠান্ডা হয়ে উঠছে। অরণ্য দ্রুত তার খাতায় নোট নিতে চায়, কিন্তু কলম জমে গেছে।তখনই পেছনে এক পাথরের বাক্স দেখতে পেল। খোলার চেষ্টা করতেই বিকট শব্দে কিছু একটা খুলে গেল—তার মধ্যে ছিল একটি চিঠি আর এক নারীর রক্তমাখা বালা।চিঠিতে লেখা ছিল:> “আমি হরপ্রসাদ রায়। আমার কন্যা মেঘলাকে বলি দেওয়া হয়েছিল পুরনো অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে। আমি ব্যর্থ পিতা। আমি জানি, সে ফিরে আসবে। এবং প্রতিশোধ নেবে।” অরণ্য বুঝল, মেঘলার মৃত্যু ছিল আত্মহত্যা নয়—তা ছিল এক নির্মম বলি। আর সেই মেঘলা এখনও ঘুরে বেড়ায়—ন্যায় বিচারের অপেক্ষায়।হঠাৎ করে কক্ষটা কেঁপে উঠল। আয়নার মধ্যে মেঘলা এবার চিৎকার করে উঠল——“তুমি সত্য জেনেছ, এখন তুমি দায়ী! আমায় মুক্তি দাও, নয়তো তুমি হবা আমার মতো... চিরদিনের বন্দী!”অরণ্য ছুটে বেরিয়ে এল কক্ষ থেকে। কিন্তু যখন সে পাটাতন দিয়ে ওপরে উঠতে চাইল, দেখল সেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে...

মেঘ বাড়ি (পর্ব- ৩)

• মোবারক হোসেন
• 24/06/2025
• 1 views
• 0 Comments

অরণ্য জেগে ওঠার পর নিজের হাতের পুরনো নকশাটা ভালো করে দেখলেন। মেঘ বাড়ির মূল ভবনের নিচে, উত্তর কোণের পাথরের পাটাতনের নিচে একটা গোপন সিঁড়ির কথা লেখা আছে।

See More Read Full Story