জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিক। গ্রামটা হলো বহ্মপুত্র নদীর পাশের ছোট্ট এক জনপদ — চরআলগা। সহজ-সরল, গরিব, পরস্পর নির্ভরশীল মানুষের বসবাস এই গ্রামে। তবে এবার যেন দুর্ভাগ্য একযোগে সবার ঘরে ঘরে কড়া নাড়ছে।করিম মুন্সীর একমাত্র ছেলে হাফিজ কিডনির রোগে ভুগছে। ডাক্তার বলেছে শহরে নিয়ে গিয়ে বড় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, নইলে বাঁচবে না। কিন্তু করিমের ঘরে চাল নাই, ওষুধের টাকা তো দূরের কথা।অন্যদিকে বানু মণ্ডলের মেয়ের বিয়ে হয়েছিল পাশের গ্রামে। কিন্তু যৌতুকের টাকার অভাবে মেয়েটিকে তালাক দিয়ে দিয়ে দিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোক। লোকচক্ষুর ভয়ে বানু মণ্ডল ঘরেই লুকিয়ে আছে।তারা মিয়া যিনি গরু বিক্রি করে তার তিন মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন, হঠাৎ একরাতে তার গোয়ালঘর ফাঁকা হয়ে গেল। সব মিলিয়ে ১৮টা গরু চুরি হয়ে গেছে। মাথায় হাত তারা মিয়ার।এমন দুঃসময় কখনো একসাথে গ্রামে আসে না। লোকজন হাটে-বাজারে শুধু কান্না আর আফসোস করে বেড়ায়। কিন্তু হঠাৎ একদিন এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে।প্রথম বিস্ময়:করিম মুন্সী সকালবেলা দেখে তার বারান্দায় একটি চিঠি রাখা, পাশে একটি বড় খাম। খামে একেবারে গুনে গুনে ৫০ হাজার টাকা আর চিঠিতে লেখা—> “হাফিজকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। দেরি কইরেন না।”– একজন বন্ধু করিম কাঁদতে কাঁদতে বলে, “এ কোন বন্ধু আমার? কে এমন উপকার করল?”দ্বিতীয় বিস্ময়:দুদিন পর, বানু মণ্ডলের বাড়িতে এক মহিলা আসে। সে বলে, \"আপনার মেয়ের জন্য আমি একটা কাজ ঠিক করে দিয়েছি শহরে। হোস্টেলে থাকবে, রান্নার কাজ। মেয়েটা সাহস পাবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে।\"কিন্তু কেউ চেনে না সেই মহিলাকে। সে এসে যেমন হঠাৎ আসে, তেমনি হাওয়ার মত উধাও হয়ে যায়।তৃতীয় বিস্ময়:রাত তিনটায় হঠাৎ গ্রামের বাঁশবাগানের পাশ থেকে মুকুল মাঝি দেখে, তিনজন মুখ ঢাকা লোক তারা মিয়ার গরু রেখে যাচ্ছে। সাথে একটা সাদা কাগজ, তাতে লেখা—> “গরুগুলা এখন নিরাপদ। অন্যায় করে লাভ নাই, সব দেখা হয়।” পুরো গ্রাম থতমত খেয়ে যায়। এতসব ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে?রহস্য উদঘাটন:মসজিদের ইমাম সাহেব বলেন, “তোমরা কি আবু সায়েদকে মনে রেখেছো?”সবার মুখে বিস্ময়।ইমাম সাহেব বলেন, “ছয় বছর আগে একটা যুবক, যার নাম আবু সায়েদ, নদীতে ডুবে মারা যায়। সে খুব ভালো ছেলে ছিল। কারো বিপদ শুনলে ছুটে যেত। গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়াত। নদীর পাড়ে নাকি এখনো মাঝে মাঝে কেউ তাকে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াতে দেখে।”এক বৃদ্ধ বলেন, “আমার নাতি বলছিল, গতকাল রাতে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল আমাদের উঠানে, কিন্তু তার পা-দুটি ছিল না! মনে হচ্ছিল, মাটির ওপর ভাসছে!”আরেকজন বলেন, “আমি রাত জেগে খেজুর গাছ পাহারা দিচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি এক লোক নদীর ধারে বসে কাঁদছে। কাছে যেতেই মিলিয়ে গেল কুয়াশার ভেতর!”পরিশেষ:গ্রামে তখন কানাঘুষা— আবু সায়েদের আত্মা এখনো এই গ্রামে আছে। সে যাদের ভালোবাসতো, তাদের সাহায্য করছে। কেউ বলে, সে ভূত নয়, রক্ষাকর্তা। কেউ বলে, ছায়া মানব।গ্রামের নাম রাখা হয় নতুন করে: “সায়েদনগর”।আর সন্ধ্যার পর নদীর ঘাটে কেউ আর জোরে কথা বলে না।কারণ, “সায়েদ এখনও দেখে... কে কাঁদে, কে হাসে, কে ঠকায়, কে বাঁচায়।”
জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিক। গ্রামটা হলো বহ্মপুত্র নদীর পাশের ছোট্ট এক জনপদ — চরআলগা। সহজ-সরল, গরিব, পরস্পর নির্ভরশীল মানুষের বসবাস এই গ্রামে। তবে এবার যেন দুর্ভাগ্য একযোগে সবার ঘরে ঘরে কড়া নাড়ছে।করিম মুন্সীর একমাত্র ছেলে হাফিজ কিডনির রোগে ভুগছে। ডাক্তার বলেছে শহরে নিয়ে গিয়ে বড় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, নইলে বাঁচবে না। কিন্তু করিমের ঘরে চাল নাই, ওষুধের টাকা তো দূরের কথা।
খুব সুন্দর