বিদেশে দশ বছর কাটিয়ে যখন দেশে ফিরলাম, গ্রামের মানুষের মুখে শুনলাম একটি গল্প,,আমার কানে সবচেয়ে বেশি লেগে রইলো সেই গল্প—রাত দশটার পর শ্বশানপারের পথ দিয়ে গেলেই দেখা যায় এক সুন্দরী নারীকে। লাল শাড়ি, খোলা চুল, সাদা মুখ, চোখদুটো যেন কয়লার আগুনের মতো জ্বলছে। কেউ কথা বলতে যায়নি—যে গেছে, সে নাকি পাগল হয়ে ফিরেছে বা ফিরেইনি।আমি তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু সেই গল্পটা আমার মাথায় গেঁথে গেল। কেমন যেন এক অদ্ভুত টান অনুভব করতাম। যেন কেউ কানে কানে বলছে“এসো, একবার এসো…এক রাতে, ঠিক এগারোটার সময়, চুপিচুপি বাড়ি থেকে বের হলাম। হাতে টর্চলাইট, বুকের ভেতর কাঁপুনি। শ্বশানপারের রাস্তা ধরে হাঁটছি, দূরে হালকা কুয়াশা, বাতাসে গন্ধ—পুরনো ফুল আর ধূপের মিশ্র গন্ধ। মনে হচ্ছিল, কেউ যেন পিছন থেকে হাঁটছে আমার সঙ্গে।হঠাৎ টর্চের আলোয় দেখলাম—একটা সাদা চুল খোলা নারী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। মাথা নিচু, শাড়ির আঁচল মাটিতে টানছে। আমি সাহস করে বললাম—“এই…আপনি কে?”সে ধীরে ধীরে মুখ তুলল। আর আমি জমে গেলাম। মুখটা আমার একদম চেনা! ও তো নীলা! আমার কলেজ জীবনের প্রেমিকা, যে সাত বছর আগে নদীতে ডুবে মারা গিয়েছিল!আমি কেঁপে উঠে বললাম—“নীলা… তুই!”সে হেসে বলল,“এতদিন পর চেনলি?”আমি এক পা এগোতেই বাতাস হুহু করে বইল, চারপাশের গাছের পাতা নড়তে লাগল। কুয়াশার মধ্যে হঠাৎ করে চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল। আমার টর্চ নিভে গেল।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি নীলা ধীরে ধীরে ভেসে উঠছে! তার পা মাটিতে নেই, চোখ লালচে আগুনের মতো, আর গলায় সোনার চেইনটা দুলছে—যেটা আমি একদিন উপহার দিয়েছিলাম।সে ফিসফিস করে বলল,“তুই কথা দিয়েছিলি, একদিন আমায় নিতে আসবি… আজ নে, আমি অপেক্ষায় আছি।”আমি পেছনে দৌড়াতে গেলাম, কিন্তু পা যেন জমে গেল। সে কাছে আসছে, ঠান্ডা শ্বাস বুকের ভেতর ঢুকছে, আর আমি অসাড় হয়ে যাচ্ছি।শেষবার যা মনে আছে—তার ঠান্ডা আঙুল আমার গলায় ছুঁয়েছিল, তারপর আমি আর কিছুই টের পাইনি।পরদিন সকালে, গ্রামের লোকেরা আমাকে শ্বশানের সামনে অচেতন অবস্থায় পেল। চোখ খোলা, মুখে এক টুকরো হাসি, কিন্তু জ্ঞান নেই। কয়েকদিন পর জ্ঞান ফেরে, কিন্তু কথা আর বলতে পারি না।কেউ বলে আমি পাগল হয়ে গেছি, কেউ বলে নীলার আত্মা এখনো আমার ছায়ায় ঘুরে বেড়ায়।রাতে মাঝেমাঝে খেয়াল করি ছায়ার মত পাশে থেকে কেউ আমাকে নজরদারি করছে।
বিদেশে দশ বছর কাটিয়ে যখন দেশে ফিরলাম, গ্রামের মানুষের মুখে শুনলাম একটি গল্প,,আমার কানে সবচেয়ে বেশি লেগে রইলো সেই গল্প—রাত দশটার পর শ্বশানপারের পথ দিয়ে গেলেই দেখা যায় এক সুন্দরী নারীকে। লাল শাড়ি, খোলা চুল, সাদা মুখ, চোখদুটো যেন কয়লার আগুনের মতো জ্বলছে। কেউ কথা বলতে যায়নি—যে গেছে, সে নাকি পাগল হয়ে ফিরেছে বা ফিরেইনি।
0 Comments